মৌলভীবাজার প্রতিনিধি
বাংলাদেশ চা বোর্ডের নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল শেখ মো. সরওয়ার হোসেন বলেছেন, চলতি মৌসুমে এবার আমাদের একটু ডেফিসেন্সি যাবে। এবার আমরা উৎপাদন টার্গেটে যেতে পারব না। কোয়ালিটিতে উত্তরবঙ্গের চা-বাগানগুলোকে যদি আমরা আমলে নেই, তাহলে হয়তো লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হবে। কিন্তু কোয়ালিটি বিবেচনায় সেটা সম্ভব হবে না। তবে যতটুকু জেনেছি, অক্টোবর পর্যন্ত বেশির ভাগ চা বাগান গত বছরের চেয়ে কিছুটা বেশি উৎপাদন হয়েছে’।
গতকাল রবিবার (১০ নভেম্বর) মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে অবস্থিত বাংলাদেশ চা বোর্ড প্রকল্প উন্নয়ন ইউনিটের আয়োজনে কনফারেন্স রুমে চতুর্থবারের মতো পাঁচ দিনব্যাপী ‘টি টেস্টিং এন্ড কোয়ালিটি কন্ট্রোল’ প্রশিক্ষণ কোর্সের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশ চা বোর্ড প্রকল্প উন্নয়ন ইউনিটের পরিচালক ড. একে এম রফিকুল হকের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের যুগ্ম-সচিব ও বাংলাদেশ চা বোর্ডের (গবেষণা ও উন্নয়ন) সদস্য ইয়াছমিন পারভীন তিরবীজি, বাংলাদেশ চা গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ড. মো. ইসমাইল হোসেন, বাংলাদেশীয় চা সংসদ সিলেট ব্রাঞ্চের চেয়ারম্যান ও ফিনলে চা কম্পানির ভাড়াউড়া ডিভিশনের মহাব্যবস্থাপক জি এম শিবলী।
চায়ের দাম না পাওয়ার বিষয়ে চা বোর্ডের চেয়ারম্যান আরো বলেন, ‘প্রাইসের চেয়ে কোয়ালিটির চ্যালেঞ্জটা বেশি। কোয়ালিটি কম্প্রোমাইজ করার জন্য প্রাইসটা ধরে রাখতে পারছে না। চায়ের কোয়ালিটি ইমপ্রোভ করতে পারলে দাম অবশ্যই পাওয়া যাবে। কিন্তু এখন যেহেতু কোয়ালিটি ইমপ্রুভ হচ্ছে না তাই প্রাইস পড়ে যাচ্ছে। লোকজন ভাল চায়ের সাথে খারাপ চা মিশ্রণ করে বাজারে সেল করছে। যার কারণে প্রাইসটা ফল্ করছে। মানুষ যখন বেশি টাকা দিয়ে একটা জিনিস কিনতে যাবে তখন ভালোটাই কিনবে। তাই ভাল চা করতে পারলে দাম অবশ্যই পাওয়া যাবে। এছাড়া যদি প্রশাসনিক কোন চ্যালেঞ্জ থাকে আমরা সবাই মিলে সেটা থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করব।
ন্যাশনাল টি কম্পানির বাগানে উৎপাদন বন্ধের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘ওই চা বাগান (এনটিসি) সরাসরি টি বোর্ডের অধীনে নেই। কিভাবে এই রুগ্নদশা থেকে উৎপাদনে ফিরিয়ে আনা যায় এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয়-এনটিসি আলাদা মিটিং করছে । আমরাও এটাতে ইনভলব হচ্ছি। সবাই মিলেই চেষ্টা করছি যাতে করে এনটিসি’র যে কারেন্ট চ্যালেঞ্জ সেটা থেকে বেরিয়ে আসতে পারে। এখানে শুধু বাগানেই পাতা নষ্ট হচ্ছে সেটাই না, অনেক চা গুদামে আছে সেটাও একটা ইস্যু। অনেক শ্রমিক রয়েছে যারা কাজ করতে পারছে না এবং অনেক চা পাতা গার্ডেনে পড়ে আছে সেগুলো উৎপাদন করতে পারছে না। সব লেভেল থেকেই চেষ্টা করা হচ্ছে উত্তরণের জন্য। সরকারের পক্ষ থেকে স্বদিচ্ছার কোনো অভাব নেই। ওই বাগানের আগের এমডি এবং চেয়ারম্যান নেই। বর্তমান সরকারের পক্ষ থেকে একজন এমডি, একজন চেয়ারম্যানকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, বোর্ড অব ডাইরেক্টর চার-পাঁচজন নিয়োগ করা হয়েছে মন্ত্রণালয় থেকে। সবাই মিলেই চেষ্টা করছে। আমার বিশ^াস, স্বল্পতম সময়ের মধ্যেই এ সমস্যা থেকে সমাধানের দিকে যেতে পারব, যদি আমরা সত্যি সত্যি মন থেকে অনুধাবন করতে পারি’।
অবৈধ পথে নি¤œমানের চা আমদানী এবং দেশিও চা বিদেশে রপ্তানির ব্যাপারে চা বোর্ডের চেয়ারম্যান বলেন, ‘টি বোডের্র পক্ষ থেকে আমরা মনিটরিং আরো জোরদার করব। আমাদের উত্তরবঙ্গে আমাদের মনিটরিং আরো বাড়বে, যাতে করে আমরা কোয়ালিটিটা আরো ধরে রাখতে পারি। আমরা যতই পরিকল্পনা করি না কেন যদি কোয়ালিটি চা উৎপাদন করতে না পারি তাহলে রপ্তানি করা সম্ভব নয়। আমরা সবার সাথে কথা বলছি কোয়ালিটি চা উৎপাদনের জন্য। এজন্য ডিপ্লমেটিক চ্যানেলে আমাদের যোগাযোগ বাড়ানোর পাশাপাশি কোয়ালিটি ইমপ্রুভ করতে হবে’।
তিনি বলেন, ‘পাশাপাশি চোরাই পথে যেসব চা পাশর্^বর্তী দেশ থেকে আসছে সেগুলো রোধ করার জন্য আমরা বিজিবিকে রিকোয়েস্ট করব যাতে করে বর্ডার মনিটরিং তারা বাড়িয়ে দেয়, বিশেষ করে যেসব এলাকা দিয়ে নি¤œ-মানের চা স্মাগলাররা নিয়ে আসে সেসব বর্ডারে যেন তারা নজরদারি আরো বাড়িয়ে দেন।
তার আগে চেয়ারম্যান বিটিআরই চা বাগানে উৎপাদিত ভ্যালু অ্যাডেড চা প্রদর্শনী কেন্দ্র ঘুরে দেখেন। এখানে ১২ রকমের কোয়ালিটি চা প্রদর্শন করা হয়। এগুলো হলো প্রিমিয়াম বøাক টি, অর্থডক্স টি, অলং টি, গ্রীন টি, হোয়াইট টি, ইম্পেরিয়াল জেসমিন টি, মাশালা টি, এলোভেরা এন্ড পাইনঅ্যাপল টি, মর্নিং টি, চিনা লিচি টি, তুলশি টি, চ্যামেলি টি। এদিকে পাঁচ দিনব্যাপী এ ‘টি টেস্টিং এন্ড কোয়ালিটি কন্ট্রোল’ প্রশিক্ষণ কর্মশালা উদ্বোধনী দিনে দেশের ৮০ থেকে ৯০টি চা বাগানের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।
কর্মশালার প্রশিক্ষক মো. মুজিবুর রহমান বলেন, টি টেস্টিং ছাড়া চায়ের ভালো-মন্দ কেউ বিচার করতে পারবে না। টি টেস্টিং সম্পর্কে যদি জানা না থাকে, চায়ের ১০টা গ্রেড সম্পর্কে যদি ধারনা না জানা থাকে, তাহলে ভালো চা-খারাপ চা বুঝতেই পারবে না। এটা বাগান মালিক হোক বা বাগানের ব্যবস্থাপক হোক কিংবা চা ব্যবসায়ী হোক, সবার জন্য জানা থাকা প্রয়োজন। এই কর্মশালার মাধ্যমে অংশ গ্রহন কারীদের ধারনা দেওয়া হবে কিভাবে টি টেস্টিং করতে হয়।